Breaking

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমছে ছুটি, বাড়ছে কর্মঘণ্টা: শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমছে ছুটি, বাড়ছে কর্মঘণ্টা: শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমছে ছুটি, বাড়ছে কর্মঘণ্টা: শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে 


দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটির সংখ্যা কমানো এবং দৈনিক কর্মঘণ্টা (ক্লাসের সময়) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র।


ছুটি হ্রাস: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন উৎসব ও দিবস উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচলিত ছুটি কমিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে একাধিক দিনব্যাপী ছুটির প্রবণতা কমানোর ওপর

জোর দেওয়া হচ্ছে।


কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি: বর্তমানে বিদ্যালয় স্তরে প্রচলিত দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা এবং কলেজ স্তরে ৫-৬ ঘণ্টার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন আরও বেশি সময় পাঠদান ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করা সম্ভব হবে।



শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই উদ্যোগের পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো:


1. শিক্ষার্থীদের কার্যকর যোগাযোগ সময় বৃদ্ধি: অধিক সময় প্রতিষ্ঠানে অবস্থানের ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে জ্ঞান বিনিময়, প্রশ্নোত্তর এবং সহপাঠীদের সাথে গঠনমূলক আলোচনার জন্য বেশি সময় পাবে।


2. পাঠ্যসূচি পূরণে সহায়ক: বার্ষিক পাঠ্যসূচি সময়মতো ও পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ করতে অতিরিক্ত সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


3. গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ: ছুটি কমে যাওয়ায় শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং দীর্ঘ ছুটির পরে শিক্ষার্থীদের পুনরায় পাঠে মনোযোগী হতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।


4. সহশিক্ষা কার্যক্রমে জোর: বাড়তি সময়কে ব্যবহার করে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, সৃজনশীল কর্মশালা, ল্যাবরেটরি কাজ ইত্যাদি সহশিক্ষা কার্যক্রমের প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে।


5. আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি: অনেক দেশেই শিক্ষার্থীরা দৈনিক স্কুলে বেশি সময় ব্যয় করে; সেই ধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে।



এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ কমিটি গঠনের কাজ করছে। কমিটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নতুন ছুটির তালিকা এবং দৈনিক সময়সূচির রূপরেখা প্রণয়ন করবে। এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করা হবে।



এই প্রস্তাবের ব্যাপারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ শিক্ষার মান বাড়ানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, অনেকেই বিশেষ করে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ ও যানজটের মধ্যে দীর্ঘ সময় স্কুলে অবস্থান, শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি, বাড়ির কাজ ও বিশ্রামের সময় কমে যাওয়া এবং শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপের মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।



কিছু শিক্ষাবিদ মনে করেন, শুধু সময় বাড়ালেই শিক্ষার মান বাড়বে না, বরং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার মান উন্নতকরণ, শিক্ষার পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কারিকুলামের আধুনিকায়নের দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তারা ছুটি কমানো ও সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করলেও সতর্কতার সাথে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই উদ্যোগ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখে, তা এখন দেখার বিষয়। তবে, এই পরিবর্তন যাতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য অতিরিক্ত চাপ ও কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

#