![]() |
| Jahangirnagar university |
সাভার, ঢাকা — জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (JU) সম্প্রতি একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান রাত ১০টার পরে চলবে না। এই নির্দেশটি আগামী পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি, যে অনুষ্ঠানে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে, সেসবেও শব্দ মাত্রা “সহনীয় সীমায়” রাখতে হবে, বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
শান্তি, নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সিদ্ধান্তকে “শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা” রক্ষার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
অভিভ্যক্তি অনুযায়ী, হয়ত সম্প্রতি রাতে ক্যাম্পাসে এমন অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে যা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখতে বাধা দিচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ-পরিবেশে থাকা এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা এসেছে।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের নির্দেশ নতুন নয়। একটি পুরনো সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মুক্তমঞ্চ (উন্মুক্ত আম্পিথিয়েটার)-এ ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে রাত ১০টার পর অনুষ্ঠান বন্ধ করার নিয়ম ছিল।
তার আগে, বিশেষ করে উইনটার-মাসে, ব্যাচ রিইউনিয়ন বা এলামনাই সমাবেশ গভীর রাত পর্যন্ত চলত, যা প্রশাসনের মতে শিক্ষাগত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছিল।
পুরানো নিয়মে, নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে “বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন” করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ব্ল্যাকলিস্ট” করা হতে পারে।
বহু শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মী এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করছেন। বিডিনিউজ২৪-এর এক সাক্ষাৎকারে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক অ্যালায়েন্সের সভাপতি প্রিয়ন্তি বলেছেন যে, “এই সিদ্ধান্ত অত্যাচারমুলক চিন্তার প্রকাশ” কারণ এটি ছাত্র-সংগঠনগুলোর ঐক্য গঠনের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তার মতে, ছাত্রদের মধ্যে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে যে সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে, তা প্রশাসন কেন “হুমকি” হিসেবে দেখে, প্রশ্ন করা জরুরি।
অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা নতুন নির্দেশনা অমান্য করবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষণ: কেন প্রশাসন এই সিদ্ধান্তে গিয়েছে
1. নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা: রাতে অনুষ্ঠান চলার কারণে ক্যাম্পাসে অরিয়েন্টেশন হারিয়ে যেতে পারে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রশাসন মনে করছে এই সীমাবদ্ধতা জরুরি।
2. শিক্ষাগত পরিবেশ: বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো বিশ্বাস করে যে রাতভর পার্টি বা সামাজিক অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগ কমাতে পারে, বিশেষত পরীক্ষাসময়ের সময়।
3. শাবব্যয় ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ: দীর্ঘ রাতের অনুষ্ঠান ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক শান্তি এবং পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে; এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করার কারণে।
4. প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ: এই নির্দেশ প্রবল প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের দর্শনটিকে প্রতিফলিত করতে পারে — প্রশাসন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সীমাতে রাখতে চাইছে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।
সাংস্কৃতিক সংস্থা, স্টুডেন্ট ক্লাব এবং এলামনাই ব্যাচগুলোর মধ্যে চাপ বাড়তে পারে কারণ তারা রাতের অনুষ্ঠান ও পুনর্মিলনকে সীমিত দেখছেন।
যদি এই নিষিদ্ধ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলে ক্যাম্পাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন পরিবর্তিত হতে পারে: স্বাধীন পার্টি-চলন কমে যেতে পারে এবং ছাত্রদের সংগঠন গড়ার রূপধারা পাল্টে যেতে পারে।
অন্যদিকে, যদি নির্দেশিকা কার্যকরভাবে এবং ন্যায্যভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এটি ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরিয়ে দিতে পারে এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
