![]() |
| BRAC University |
BRAC University কেনো যুক্ত হলো কার্নেজি মেলনের এথিক্যাল AI ফোরামে — এবং এটা আমাদের জন্য কেনো বড় কথা
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় BRAC University সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে Carnegie Mellon University-এর Open Forum for AI (OFAI)-তে, যা একটি আন্তঃবৈজ্ঞানিক, “মানব-কেন্দ্রিক” এবং ন্যায্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গঠনের দিকে মুল দৃষ্টি দিয়ে কাজ করে।
প্রতিষ্ঠান সংক্ষিপ্ত পরিচয়
BRAC University: ঢাকায় অবস্থিত, একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যার মিশন “গ্লোবাল সাউথ-এর চিন্তা এবং সমাধান তৈরি করা।”
Open Forum for AI (OFAI): কার্নেজি মেলনে ২০২৪ সালে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ওপেন, স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ এবং জনহিতকরভাবে গড়ে তোলা।
কেন যুক্ত করলো BRAC University?
1. গ্লোবাল দক্ষিণে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি
OFAI সক্রিয়ভাবে চায় বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, দেশ এবং সম্প্রদায়কে অংশগ্রহণ করাতে — শুধুমাত্র বড় প্রযুক্তি কোম্পানি নয়।
BRAC University কে নেওয়া হয়েছে কারণ এটি গ্লোবাল সাউথ (বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশ) থেকে একটি শক্তিশালী এবং উদ্ভাবনী একাডেমিক প্রতিষ্ঠান।
2. সুদীর্ঘ সামাজিক প্রভাব ও উন্নয়নকেন্দ্রিকতা
BRAC University-এর কাজ শুধু শিক্ষা নয় — এটি সামাজিক উদ্ভাবন, উন্নয়ন, এবং নীতি-স্তরের প্রভাব (policy advocacy)-এ সক্রিয়।
3. টেকনোলজিতে দায়-বদ্ধ উদ্ভাবন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এথিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গা গ্রহণ করা BRAC-এর জন্য প্রাকৃতিক লজিক: তারা গ্লোবাল সহায়তা এবং ন্যায় মূলক প্রযুক্তি গড়ার দিকে আগ্রহী।
4. সংলাপ ও নীতি প্রভাব
বিশ্ববিদ্যালয়টি OFAI-এর মাধ্যমে গবেষণা, নীতি আলোচনা, প্রোটটাইপ ডিজাইন এবং আউটরিচ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করবে।
5. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
এই ধরনের গ্লোবাল ফোরামে যুক্ত হওয়া BRAC University-এর প্রোফাইল বাড়াবে এবং AI গড়ার নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের নেতৃস্থানীয় অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।
কি কাজ করবে BRAC University OFAI-এর সঙ্গে?
BRAC University-এর অংশগ্রহণ কিছু নির্দিষ্ট কাজ এবং দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত করবে:
গবেষণা: OFAI-এর কাজের অংশ হিসেবে গবেষণা চালাবে, বিশেষ করে এমন টেকনিকগুলোতে যা “ওপেন” থাকা মডেল, ডেটা বা সফটওয়্যারে দৃষ্টি দেয়।
প্রোটোটাইপ ডিজাইন: নতুন মডেল এবং পাইলট প্রোজেক্ট তৈরি করা, যেগুলো স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণকে সামনে রাখবে।
নীতি গঠন ও পরামর্শ: OFAI-এর নীতিনির্ধারণকারী গ্রুপে অংশ নিয়ে AI নীতিমালা, মূল্যায়ন সূচক, গোপনীয়তা ন্যূনতম মান, এবং স্বচ্ছতা ইত্যাদির ওপর কাজ করা।
আউটরিচ এবং অংশীদারি: অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি, সরকার ও শিল্প ধাপকে একত্রিত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে AI-নীতিতে জনসাধারণ এবং বিভিন্ন অংশগ্রহণকারীর ভয়েস শোনা যায়।
মূল্যায়ন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি: কাজ করবে এমন প্রযুক্তি মানদণ্ড তৈরি করতে যা ন্যায্যতা, নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং অংশগ্রহণে নজর দেয়।
চাকরির ক্ষেত্রে — নেতিবাচক সুযোগ (চ্যালেঞ্জ) কি হতে পারে?
একেবারেই, এতে কিছু উদ্বেগ থাকতে পারে, তবে তারা পুরোপুরি নেতিবাচক নাও হতে পারে:
1. অটোমেশন ও কর্মস্থলে পরিবর্তন
গ্লোবাল AI প্রবণতা যেমন স্বয়ংক্রিয়করণ (automation) জনবনের মধ্যে কিছু কাজকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
যদি BRAC University AI-গুরুতর নীতি আলোচনা এবং প্রযুক্তি বিকাশে অংশ নেয়, তাহলে দেশীয় শিল্প বা সরকারের দিকে ঝুঁকি থাকতে পারে যে AI প্রযুক্তি দ্রুত কাজের ধরণ পরিবর্তন করবে।
2. চাকরির শিফট
AI-নির্ভর প্রোজেক্টগুলোতে নতুন ধরনের দক্ষতা (skills) দরকার হবে, যেমন ইথিক্যাল AI গবেষণা, ডেটা প্রাইভেসি, AI গভার্নেন্স ইত্যাদি। এটি কিছু পুরাতন ধরনের কাজকে কম প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে।
কর্মীদের রিস্ক থাকতে পারে যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা রূপান্তর (re-skilling) ব্যবস্থা না করা হয়।
3. অসাম্যতা (inequality)
যদি AI ব্যবহারে এবং নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ সীমিত থাকে, তাহলে কিছু অংশগ্রহণকারী বা সংস্থা বাদ পড়তে পারে, এবং এটি চাকরির সুযোগে অসাম্যতা বাড়াতে পারে।
তবে, BRAC University–এর অংশগ্রহণ যদি “ইনক্লুসিভিটি” এবং অংশীদারি (participation) বাড়িয়ে তোলে, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব সীমিত করা যেতে পারে।
ভালো দিক এবং উপকারিতা
এই সিদ্ধান্তের অনেক ইতিবাচক দিক আছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের এবং গ্লোবাল দক্ষিণের প্রেক্ষাপটে:
1. গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের উপস্থিতি
BRAC University-এর OFAI-এ অংশগ্রহণ বাংলাদেশের AI-নৈতিকতা ও গভার্নেন্স দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরবে।
এটি “বাংলাদেশ সহ গ্লোবাল সাউথ” কে একটি সক্রিয়, দায়-বদ্ধ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।
2. জনসাধারণ এবং নীতি প্রভাব
নীতিগত (policy) ফোরামে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে BRAC বিশ্ববিদ্যালয় দেশীয় সিদ্ধান্ত-গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করতে পারে — যাতে AI উন্নয়ন জনহিতকর এবং ন্যায়পূর্ণ হয়।
তারা স্থানীয় সমস্যা ও চাহিদাকে যে প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে পারে, সেটি পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
3. শিক্ষার্থীদের সুযোগ
BRAC University-র শিক্ষার্থীরা এথিক্যাল AI-গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ ও প্রকল্প ডিজাইনে কাজ করার সুযোগ পাবে।
এটি তাদের ক্যারিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করবে — শুধু প্রযুক্তি উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক প্রভাব ও দায়বদ্ধতা-ভিত্তিক কাজেও দক্ষ হবে।
4. সুস্থতম AI গঠন
OFAI-এর অংশ হিসেবে BRAC বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্য উদ্যোগগুলি স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক AI মডেল তৈরি করার কাজে অবদান রাখতে পারে।
এটি ভবিষ্যতে AI প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝুঁকি কমাতে, গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং বৈষম্য (inequality) হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
5. সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট লক্ষ্য (SDG) সাথে সামঞ্জস্য
এই অংশীদারিত্ব BRAC University-এর UN SDG-এনগেজমেন্টকে শক্তিশালী করবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি বিশেষভাবে SDG 4 (গুণগত শিক্ষা), SDG 9 (ইনোভেশন, অবকাঠামো), SDG 10 (অসমতা হ্রাস), SDG 16 (শান্তি ও ন্যায়) এবং SDG 17 (পাটনারশিপ)-এর সঙ্গে যুক্ত।
অর্থাৎ, এটি শুধু প্রযুক্তি উন্নয়নই নয়, সমাজসংহতি ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী দিক।
সার্বিকভাবে উপকার কতটা হবে?
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: যদি BRAC University সক্রিয়ভাবে গবেষণা ও নীতি কাজ চালায়, তাহলে এটি বাংলাদেশের AI-নীতিতে গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এবং স্থানীয় দৃষ্টিকোণ থেকে AI গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে।
শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন: শিক্ষার্থীদের, গবেষকদের এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি মূল্যবান সম্প্রসারণ প্ল্যাটফর্ম হবে।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে: AI প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার যদি জনহিতকরভাবে করা হয়, তাহলে গোপনীয়তা, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি বড় সামাজিক উপকার গড়তে পারে।
উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে: গ্লোবাল সাউথ-এর কণ্ঠ অনেক সময় AI নীতিতে কম শোনা যায় — BRAC University-এর অংশগ্রহণ তা পাল্টাতে পারে।
চ্যালেঞ্জ এবং কীভাবে এগুলো মোকাবিলা করা যেতে পারে
প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা গঠন: BRAC বিশ্ববিদ্যালয়কে তার শিক্ষার্থীদের এবং কর্মীদের AI নীতি, এথিক্স এবং প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
অলাভজনক অংশীদারি: শুধুমাত্র একাডেমিয়া নয়, সরকার, সিভিল সোসাইটি ও শিল্পকে সম্পৃক্ত করে অংশীদারি গঠন করতে হবে, যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব পক্ষ অন্তর্ভুক্ত হয়।
গবেষণা অর্থায়ন: নীতিমূলক গবেষণা চালাতে তহবিল করা জরুরি — স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প পরিচালনা করার জন্য।
স্ঠানীয় প্রভাব: বিশ্বব্যাপী ফোরামে অংশগ্রহণ করে শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং স্থানীয় সম্প্রদায় এবং সমস্যার প্রতি মনোযোগ রাখতে হবে, যাতে বাস্তব কাজ গড়ে ওঠে।
BRAC University-এর Carnegie Mellon-এর Open Forum for AI-তে যুক্ত হওয়া সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-স্তরের সম্মান নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে AI উন্নয়নে ডুব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। গ্লোবাল সাউথ-এর কন্ঠ এবং অভিজ্ঞতা এই ফোরামে আসলে মূল্যবান — এবং
BRAC University যদি এই সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়, তবে এটি বাংলাদেশের AI ভ্রমণকে আরও মানব-কেন্দ্রিক, ইনক্লুসিভ এবং দায়বদ্ধ করে তুলতে পারে।
