Breaking

Dhaka University ছাত্র বিক্ষোভ: রসায়ন অধ্যাপক এরশাদ হালিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

Logo Dhaka university
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছবি:  সংগৃহীত


গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডিইউ) ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রদর্শন করেন — তাদের দাবি স্পষ্ট ও গর্জনালী: রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক Md Ershad Halim-এর বিরুদ্ধে ‘অশ্লীল ও বিকৃত যৌন আচার-ব্যবহার’ অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে উচ্চ ও উদাহরণমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। 


শিক্ষার্থীরা বিকেলেই র‍্যালি হিসেবে শুরু করেন Anti-Terrorism Raju Memorial Sculpture-এ, পক্ষে পতাকার সঙ্গে শ্লোগান দেন ও তাদের দাবি জানিয়ে মানব শৃঙ্খল গঠন করেন। 

তারপর তারা আডভান্স করে প্রশাসনিক ভবনের গেটের সামনে অবস্থান নেন, সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত বিক্ষোভকে ধরে রাখেন। 

DUCSU (Dhaka University Central Students’ Union)-এর সাধারণ সম্পাদক এসএম ফারহাদ বলেন, “আমরা ধর্ষণ, হয়রানি বা সমকামিতার কোনও দোষকে সহ্য করব না” — এবং যদি প্রশাসন উচ্চতর শাস্তি না দেয়, তারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে প্রস্তুত। 


সার্বমিত্র চক্রবর্তীর মতে, “আমরা দেশের ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবার থেকে এসেছে, আমাদের পরিবার আমাদের এখানে পাঠিয়েছে যাতে আমরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পাই — কিন্তু এমন পরিবেশ, যেখানে শিক্ষকই নিরাপদ নন, তা অসম্ভব গ্রহণযোগ্য।” 


অভিযোগ এবং প্রসাসনিক প্রতিক্রিয়া

কয়েকজন রসায়ন বিভাগের পুরুষ ছাত্র অভিযোগ করেছেন যে অধ্যাপক এরশাদ হালিম তাদের প্রয়োজনীয় অস্থিরতা (একাডেমিক, মানসিক বা আর্থিক) কাজে নিয়োগ করতেন — এবং তার পর তারা আলো নিভিয়ে, দরজা বন্ধ করে গোপনে শারীরিক যোগাযোগে বাধ্য করা হতো। 


একটি ঘটনায় একজন ছাত্র বলেছে, অধ্যাপক তার বাসায় ডেকে এনে বলেছিলেন ‘শার্ট খুলে ফেলো’, পরে শারীরিক ও যৌনভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং ভীতিকরভাবে ব্ল্যাকমেইল করেছিলেন। 


ঘটনার পর অধ্যাপককে শ্রীওয়ারাপাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়, এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে স্থগিত করা হয়। 


বিচারিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে — ঢাকার একটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার জামিন অনিশ্চিত রেখে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানিয়েছেন, অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের Sexual Harassment Cell-এ জমা দেওয়া হয়েছে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


দাবির ন্যায়তা ও সামাজিক প্রভাব

এই বিক্ষোভ শুধু এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নয় — এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিরাপত্তা, বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।


শিক্ষার্থীরা দেখাচ্ছে যে কেউ শিক্ষক বলেই ক্ষমতাবান হতে পারে না — শিক্ষককে দায়িত্বশীল ও দাসত্বমুক্ত পেশাদার হিসেবে থাকতে হবে।


উদাহরণমূলক শাস্তি দাবির মানে শুধু এই এক ঘটনায় বিচার নয়, বরং ভবিষ্যতে এমন ধরনের অপব্যবহার রোধ করার একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানো।


পাশাপাশি, এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামাজিক স্তরে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারে: যৌন হয়রানির প্রতিক্রিয়া শুধু ব্যক্তিগত সীমায় সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব।


সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং পরবর্তী পথ

বিচার প্রক্রিয়া যদি ধীর হয় বা গোপনভাবে এগোনো হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস হারাতে পারে। তাদের চেতনাগত চাপ এবং মনোবল ধরে রাখতে প্রশাসন ও আইনগত প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও স্বচ্ছ হতে হবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা জরুরি — যেন আরও সংরক্ষিত শিকড় গড়ে ওঠে: শিক্ষার্থীরা অনুভব করুক, তাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে।


আইনি ও প্রশাসনিক শিক্ষা বাড়ানো দরকার, যাতে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নিতে পারে, এবং কীভাবে তাদের সুরক্ষা পাওয়া যায়, তা ভালভাবে জানে।


একাধিক ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক উদ্যোগ বিক্ষোভকে কেবল প্রতিবাদের স্তরে না রেখে, একটি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার আন্দোলনে রূপ দিতে পারে — যাতে বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও সমান সুযোগের জায়গা হয়ে ওঠে।


সমাপনী কথা

এই ঘটনা এমন এক মুখ দেখিয়েছে, যা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কতটা দুর্বল হতে পারে, যখন শক্তি এবং দায়িত্বের ভার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হয়। ছাত্রদের প্রতিবাদ কেবল চিৎকার নয় — এটি একটি আহ্বান, একটি প্রত্যাশা, এবং বিশ্বাসের অভিলাষ: যে তারা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ থাকবে, যেখানে তারা শিখে, বড় হয়, এবং তাদের স্বপ্ন গঠন করে, তা তাদের জন্য সম্মান, মর্যাদা এবং নিরাপত্তার পরিবেশে হবে।


আজকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীর ডাক হলো এক অভ্যুত্থান — নয় শুধু একজন শিক্ষক বা এক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্য, বরং পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানের আরও ন্যায়পথে ফিরে আসার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইন প্রণয়নকারী এবং সমাজ — সবার একসাথে উত্তরদায়িত্ব আছে। এটি না হলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও বিশ্বাস উভয়ই ক্ষুণ্ন হবে।

#