Breaking

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (JnU) ভর্তি পরীক্ষা ২০২৫-২৬: লিখিত বাতিল, MCQ শতভাগ—সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ

 

Jagannath university admission

উচ্চশিক্ষা ভর্তি প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (JnU) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে গৃহীত নীতিগত পরিবর্তন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রচলিত লিখিত পরীক্ষার পদ্ধতি থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ বহু-নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) নির্ভর কাঠামো গ্রহণ করেছে, যা দেশের উচ্চশিক্ষা ভর্তি প্রক্রিয়ার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিক পরিবর্তন। এই সিদ্ধান্ত কেবল পরীক্ষার পদ্ধতিই পরিবর্তন করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি কৌশল এবং প্রতিযোগিতা পরিচালনার গতিপথও আমূল বদলে দিচ্ছে।


লিখিত পরীক্ষা বাতিল ও মূল ঘোষণার তাৎপর্য

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন, প্রফেসর ড. মো. মনজুর মোরশেদ ভূঁইয়া, এই নতুন নীতিমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে JnU-এর ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে লিখিত পরীক্ষা থেকে বহু-নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) ফরমেটে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই পরিবর্তন ভর্তি প্রক্রিয়ার সামগ্রিক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করার লক্ষ্য বহন করে।

লিখিত পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়। চিরায়ত লিখিত পরীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে প্রচুর সময় ব্যয় হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রায়শই মানবসম্পদ ও লজিস্টিক্যাল জটিলতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ MCQ ভিত্তিক মূল্যায়ন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা সম্ভব। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারকে সঠিক সময়ে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা করা। দীর্ঘ ও ধীরগতির মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পরিহারের মাধ্যমে, JnU তার ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ ও দ্রুত সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। উপরন্তু, লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মূল্যায়নের যে তারতম্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, স্বয়ংক্রিয় MCQ মূল্যায়ন সেই দুর্বলতা হ্রাস করে প্রক্রিয়ায় অধিকতর বস্তুনিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে।


MCQ পদ্ধতি ও শূন্য নেগেটিভ মার্কিংয়ের প্রভাব: একুশ শতকের পরীক্ষা কৌশল


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নতুন কাঠামো অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের ভিত্তি এখন কেবল জ্ঞান অর্জন নয়, বরং দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা।


১০০% MCQ: জ্ঞান পরীক্ষা নাকি গতি পরীক্ষা?

নতুন ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নের সংখ্যা এবং সময়সীমার বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে এই পরীক্ষাটি আসলে জ্ঞানের গভীরতার চেয়ে গতির ওপর অধিক জোর দেবে। ডিনের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি ইউনিটে মোট ৯৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে মাত্র ১ ঘণ্টার (৬০ মিনিট) মধ্যে।

সংখ্যাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী প্রতি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য গড়ে সময় পাচ্ছে মাত্র ৩৭.৫ সেকেন্ড। এত অল্প সময়ে কোনো শিক্ষার্থী গভীর বা জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারবে না, কিংবা বিস্তারিত যুক্তি প্রয়োগের সুযোগও পাবে না। এই সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে যে প্রশ্নপত্রটি মূলত তথ্যভিত্তিক জ্ঞান (Fact-based knowledge), দ্রুত তথ্য পুনরুদ্ধার (Rapid Recall) এবং অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক বিষয় বোঝার গতির ওপর ভিত্তি করে নকশা করা হয়েছে। অতএব, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা (Breadth of knowledge) এবং দ্রুত রিভিশন ক্ষমতা অর্জন করাই হবে মুখ্য কৌশল। যে শিক্ষার্থী দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে এবং ওএমআর (OMR) শীট পূরণ করতে পারবে, সে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।


নেগেটিভ মার্কিং বাতিল: কৌশলগত সুযোগ ও তীব্র প্রতিযোগিতা

ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা হবে না—নতুন নীতিমালার এই দিকটি প্রতিযোগিতার চিত্র সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। নেগেটিভ মার্কিং না থাকার ফলে পরীক্ষার্থীদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বিলুপ্ত হয়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে, নেগেটিভ মার্কিং বিদ্যমান থাকলে পরীক্ষার্থীরা ঝুঁকি কমাতে সংশয়পূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যেতো, ফলে উত্তর না দেওয়ার সিদ্ধান্তও একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু নেগেটিভ মার্কিং সম্পূর্ণরূপে বাতিল হওয়ায়, কোনো প্রশ্ন ফাঁকা রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হবে। এই নীতি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাধ্য করবে—জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক—৯৬টি প্রশ্নের সবগুলোই পূরণ করতে। এই পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়বে সামগ্রিক ফলাফলের ওপর; যেখানে পরীক্ষার্থীদের গড় স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।


প্রতিযোগিতা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন শীর্ষ স্কোরারদের মধ্যে নম্বরের পার্থক্য কমে আসে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন পরীক্ষার্থী ভুলভাবে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়, সে কোনো নম্বর হারাবে না, কিন্তু সেই ১০টি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে যদি ভাগ্যক্রমে কয়েকটি সঠিক হয়, তবে তার মোট স্কোর বাড়বে। এই কারণে, ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন স্কোর বা কাট-অফ মার্কস (Cut-off Marks) অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, সামান্যতম স্কোর পার্থক্যও মেধাতালিকা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে, এবং মেধা যাচাইয়ে সমতা বজায় রাখতে টাই-ব্রেকিং রুল (যদি প্রযোজ্য হয়) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


প্রশ্নপত্র ও সময় ব্যবস্থাপনা: সংখ্যাভিত্তিক বিশ্লেষণ

JnU ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো এবং সময় ব্যবস্থাপনা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ধাপের গুরুত্ব বুঝতে পারে।


নম্বর বন্টন ও প্রশ্ন কাঠামো বিশ্লেষণ

নতুন কাঠামো অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষায় মোট প্রশ্ন সংখ্যা ৯৬টি, যেখানে প্রতিটি প্রশ্নের মান ০.৭৫। সেই হিসাবে, পূর্ণমান হবে মাত্র ৭২। সাধারণত ১০০ বা ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় অভ্যস্ত শিক্ষার্থীদের কাছে ৭২ নম্বরের এই পরীক্ষা কিছুটা ভিন্নতা তৈরি করতে পারে।

পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই ০.৭৫ এর এই বন্টন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেহেতু মোট নম্বর কম (৭২), প্রতিটি ০.৭৫ নম্বর অত্যন্ত মূল্যবান। নেগেটিভ মার্কিং না থাকলেও একটি ভুল উত্তর (যা হয়তো অন্য পরীক্ষার্থী সঠিকভাবে দিয়েছে) স্কোরের ব্যবধান বাড়িয়ে দিতে পারে। দ্রুত এবং নির্ভুল গণনার জন্য পরীক্ষার্থীদেরকে ০.৭৫ এর গুণিতক সম্পর্কে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

JnU ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ কাঠামো (২০২৫-২৬)

#