বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ: দুই ধরনের হিসাবের পার্থক্য ও অর্থনীতিতে প্রভাব
ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বিএসএস):
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩১.১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) নির্দেশিত হিসাব পদ্ধতি BPM6 অনুযায়ী এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬.৪০ বিলিয়ন ডলার।
এই দুই হিসাবের পার্থক্য অর্থনীতির পর্যবেক্ষকদের মাঝে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। কেন IMF-এর হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ কম দেখানো হচ্ছে এবং এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখবে—এসব প্রশ্নের উত্তর জানাই সময়ের দাবি।
হিসাব পদ্ধতি রিজার্ভের পরিমাণ ব্যাখ্যা
Bangladesh Bank (দেশীয় মানদণ্ড) $31.10 বিলিয়ন স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগসহ মোট মজুত বৈদেশিক মুদ্রা
IMF BPM6 (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড) $26.40 বিলিয়ন শুধুমাত্র সহজে ব্যবহারযোগ্য ও ঝুঁকিমুক্ত রিজার্ভ বিবেচনা
IMF তাদের হিসাব থেকে সেই সম্পদগুলো বাদ দিয়েছে যেগুলো দ্রুত নগদে রূপান্তরযোগ্য নয় বা বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষ।
আর পড়ুন
MCW Global Young Leaders Fellowship 2026 – Apply Now | Youth Leadership Program
রিজার্ভ কম দেখানোর মূল কারণ:
✅ এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (EDF)-এ বরাদ্দ অর্থ
✅ অন্য দেশ বা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা অর্থ
✅ স্বল্পমেয়াদী দায় ও swap চুক্তির অর্থ বাদ দেওয়া
IMF বলছে—প্রকৃত অর্থে যেসব রিজার্ভ জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবহার করা সম্ভব, শুধুমাত্র সেগুলোকেই গণনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কেন বাংলাদেশ BPM6 অনুসরণ করছে?
বাংলাদেশ বর্তমানে IMF-এর একটি ঋণ কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রিজার্ভ হিসাব পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সমন্বয় করা হচ্ছে। এর কারণ—
🔹 স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
🔹 আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থা তৈরি
🔹 বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে।
রিজার্ভ কতদিন চলবে?
বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বিবেচনায় রিজার্ভ স্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৩-৬ মাসের আমদানির ব্যয় রিজার্ভে থাকা নিরাপদ বলে ধরা হয়। বর্তমানে:
✦ Bangladesh Bank পদ্ধতিতে → ৪.৫–৫ মাস
✦ IMF BPM6 পদ্ধতিতে → ৩–৩.৫ মাস
অর্থাৎ রিজার্ভ এখনও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আছে, তবে চাপ বেড়েছে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা সংকটময় হলেও ভয়াবহ নয়। সরকার রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর মাধ্যমে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে—
> “রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ জানা গুরুত্বপূর্ণ, তবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় স্বচ্ছতা বজায় থাকলে জনগণ ও বিনিয়োগকারীর আস্থা বৃদ্ধি পাবে।”
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনও শক্তিশালী অবস্থানে আছে, তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হিসাব করলে যে চাপ দেখা যাচ্ছে—তা সমাধানে নীতি-সহায়তা প্রয়োজন। স্বচ্ছতা ও পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
