চুলকাচ্ছে আপনার ব্রণ? ডার্মাটোলজিস্ট বলছেন, এটা ফাঙ্গাল অ্যাকনি হতে পারে! পার্থক্য বুঝবেন যেভাবে...
হ্যালো বন্ধুরা! মুখে ব্রণ (Acne) হলে মনটা খারাপ হবেই। কিন্তু যদি সেই ব্রণগুলো অতিরিক্ত চুলকায়, আর সাধারণ ক্রিমে না সারে? তাহলে জানেন কি, সেটা হয়তো সাধারণ ব্রণ নয়! হতে পারে সেটা ফাঙ্গাল অ্যাকনি (Fungal Acne)। নাম শুনে ভয় পাবেন না, কিন্তু পার্থক্যটা বুঝে সঠিক চিকিৎসা নেওয়াটা খুবই জরুরি। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, ফাঙ্গাল অ্যাকনিকে ভুল করে সাধারণ ব্রণের চিকিৎসা করলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী এই ফাঙ্গাল অ্যাকনি, আর সাধারণ ব্রণ থেকে একে আলাদা করবেন কীভাবে।
ফাঙ্গাল অ্যাকনি আসলে কী?
নামে 'অ্যাকনি' হলেও এটা আসলে সাধারণ ব্রণ (যার কারণ ব্যাকটেরিয়া P. acnes) নয়।
এর আসল নাম পিটিরোস্পোরাম ফলিকুলাইটিস (Pityrosporum Folliculitis)।
মুখ, বুকে, পিঠে বা কাঁধে থাকা ছোট ছোট ছিদ্র (হেয়ার ফলিকল)-এর ভেতরে এক ধরনের ইস্ট জাতীয় ছত্রাক (সাধারণত Malassezia) অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এই সমস্যা হয়।
এই ছত্রাক আমাদের ত্বকেই স্বাভাবিকভাবে থাকে, কিন্তু নানা কারণে (ঘাম, আর্দ্রতা, কিছু প্রসাধনী, অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘ ব্যবহার ইত্যাদি) এর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে গেলে ত্বক জ্বালা করে, ফুসকুড়ি ওঠে এবং প্রচুর চুলকায়।
ফাঙ্গাল অ্যাকনি VS সাধারণ ব্রণ: পার্থক্য বুঝবেন যেভাবে
ডার্মাটোলজিস্টরা কিছু লক্ষণের উপর জোর দেন। খেয়াল করুন:
1. চুলকানি (The Itch Factor): এটাই সবচেয়ে বড় সিগন্যাল! সাধারণ ব্রণে খুব একটা চুলকায় না, বরং ব্যথা বা টানটান ভাব হতে পারে। কিন্তু ফাঙ্গাল অ্যাকনি প্রায়ই অসহ্যরকম চুলকায় । চুলকানিটা একে আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে।
2. দানার আকৃতি ও ধরন:
ফাঙ্গাল অ্যাকনি: দেখতে অত্যন্ত ছোট, প্রায় একই সাইজের গোল গোল দানা (প্যাপিউল বা পাস্টিউল)। এগুলো এক জায়গায় গুচ্ছ (cluster) আকারে থাকে। সাদা মাথাও হতে পারে, কিন্তু সেগুলো সাধারণ ব্রণের সাদা মাথার চেয়ে ছোট ও ঘন ঘন। পিঠ, বুকে, কাঁধে, কপালে, চিবুকে বেশি দেখা যায়।
সাধারণ ব্রণ: দানাগুলোর আকার-আকৃতি এক রকম হয় না – ছোট বড় মিলিয়ে থাকে। কখনও কমেডোন (ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড), কখনও লাল ফোলা দানা (প্যাপিউল), কখনও পুঁজভর্তি দানা (পাস্টিউল), কখনও বড় সিস্ট বা নডিউল হতে পারে। এগুলো গুচ্ছের চেয়ে আলাদা আলাদা বা ছড়ানো ছিটানোভাবেও দেখা দেয়।
3.কোন ক্রিমে কাজ হচ্ছে?
ফাঙ্গাল অ্যাকনি: সাধারণ ব্রণের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল (বেনজয়েল পেরক্সাইড, ক্লিন্ডামাইসিন) বা রেটিনয়েড ক্রিম/জেল ব্যবহার করেও সুফল কম মেলে। বরং কিছু ক্রিম (বিশেষ করে ভারী ময়েশ্চারাইজার বা তেল) পরলে সমস্যা বাড়তে পারে।
সাধারণ ব্রণ: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা রেটিনয়েড ট্রিটমেন্টে সাধারণত ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা যায়।
4.আবহাওয়ার প্রভাব:
ফাঙ্গাল অ্যাকনি: গরম, আর্দ্র, ঘামাচি-ওঠা আবহাওয়ায় (গ্রীষ্ম, বর্ষা) অনেক সময়েই খারাপের দিকে যায়। ঘাম বা আর্দ্রতা ছত্রাকের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
সাধারণ ব্রণ: আবহাওয়ার সাথে এর তেমন সরাসরি যোগাযোগ নেই, তবে ঘাম ত্বকে জমে ব্যাকটেরিয়ার জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
সতর্কতা ও করণীয়:
আত্মনির্ভরশীল হবেন না: উপরের লক্ষণগুলো মিলে গেলে, বিশেষ করে প্রচুর চুলকানি আর সাধারণ ব্রণের চিকিৎসায় কাজ না হলে, অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের (ডার্মাটোলজিস্ট) পরামর্শ নিন। তিনিই নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন ফাঙ্গাল অ্যাকনি কি না।
ল্যাব টেস্ট: প্রয়োজনে ডাক্তার আঁচড় বা স্ক্র্যাপিং টেস্ট করে মাইক্রোস্কোপে দেখে নিশ্চিত করতে পারেন।
চিকিৎসা: ফাঙ্গাল অ্যাকনির চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। ডাক্তার সাধারণত অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ দেবেন। এগুলো হতে পারে:
শ্যাম্পু: কেটোকোনাজল বা সেলেনিয়াম সালফাইড শ্যাম্পু (নিজে বা প্রেসক্রিপশনে) মুখে বা আক্রান্ত স্থানে ফোম তৈরি করে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে বলা হতে পারে।
ক্রিম/জেল: ক্লোট্রিমাজল, কেটোকোনাজল, টার্বিনাফাইন জাতীয় অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম/জেল।
ওষুধ (মুখে খাবার): তীব্র বা ব্যাপক আকার ধারণ করলে ডাক্তার মুখে খাওয়ার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ (যেমন: ইট্রাকোনাজল, ফ্লুকোনাজল) দিতে পারেন।
স্কিন কেয়ারে সতর্কতা:
তেল-ভিত্তিক প্রোডাক্ট বাদ দিন: ত্বকে অতিরিক্ত তেল (অয়েলি ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন, মেকআপ, হেয়ার অয়েল) ফাঙ্গাল অ্যাকনিকে উসকে দেয়। "অয়েল-ফ্রি" (Oil-Free), "নন-কমেডোজেনিক" (Non-comedogenic), "ফাঙ্গাল অ্যাকনি সেফ" লেবেলযুক্ত হালকা প্রোডাক্ট বেছে নিন।
ঘাম শুকিয়ে ফেলুন: শরীরে ঘাম জমতে দেবেন না। ব্যায়াম বা ঘামের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করে ফেলুন বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন। ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ত্বক পরিষ্কার রাখুন। তবে খুব জোরে ঘষে স্ক্রাব করবেন না। হালকা ফোমিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
তোয়ালে, বেডশিট: এগুলো নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।
মনে রাখুন: চুলকানো ব্রণকে অবহেলা করবেন না। সঠিক ডায়াগনোসিস আর চিকিৎসাই পারে আপনাকে ফাঙ্গাল অ্যাকনির এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে। ত্বকের সমস্যা ধরা পড়ার পর সঠিক চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। তাই লক্ষণ চিনুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ ত্বক ফিরে পান।
বিঃদ্রঃ: এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে লেখা। কোনও চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
